চ্যানেল নিউজ : গাজার উত্তরাঞ্চলের ১১ লাখ বাসিন্দাকে এলাকা ছাড়তে আল্টিমেটাম দিয়েছে ফিলিস্তিনের সেনাবাহিনী। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের এলাকা ছেড়ে দক্ষিণে সরে যেতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলের এমন নির্দেশনার ফলে গাজার আকাশজুড়ে ভয় আর আশঙ্কার ঘনঘটা। এলাকাজুড়ে টানা সাত দিন বোমাবর্ষণ করে চলেছে ইসরায়েল। খবর আলজাজিরার।
শুক্রবার গাজার বাসিন্দাদের এমন আল্টিমেটাম দিয়েছে ইসরায়েল। এরপর তারা এ অঞ্চলের স্থলপথে বড় আকারে অভিযান চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর আগে সপ্তাহের শুরুতে ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় হামাস।
ইসরায়েলের এমন আল্টিমেটামের পর হামাসের শরণার্থী কর্তৃপক্ষ বাসিন্দাদের এলাকা না ছাড়তে নির্দেশ দিয়েছে। তারা বাসিন্দাদের নিজ এলাকায় অবস্থান করে কঠোর প্রতিরেোধ তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছে।
হামাসের এমন নির্দেশনা আসলেও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ভয় আর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গাজার বাসিন্দা নিজেদের মালামাল গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে। তারা গাড়ি ভ্যান বা যে যা পাচ্ছেন তাতে করে নিজেদের মালামাল দক্ষিণের দিকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। লোকজন একে অন্যের কাছে- কোনোদিকে চলতে হবে আর কোন পথ এড়িয়ে চলতে হবে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করছে। এভাবে করে ইসরায়েলের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা এড়িয়ে সঠিক পথের নির্দেশনা জেনে নিচ্ছেন।
গাজার আকাশজুড়ে ভয় আর আতঙ্ক
২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজা ফাঁকা করতে বলল ইসরায়েল
এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার উত্তরাঞ্চলে শনিবার সকাল থেকে সড়ক ফাঁকা হয়ে গেছে। তারা এখন ঘরে অবস্থান করেছেন এবং সামনে ইসরায়েলের এলাকা ত্যাগের নির্দেশনার পর নিজেদের করণীয় নিয়ে ভাবছেন। বর্তমানে সেখানকার রাস্তায় অ্যাস্বুলেন্স ছাড়া কোনো গাড়ির দেখা মিলছে না। এ ছাড়া ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়েছে। ফলে ফিলিস্তিনিদের দাবি, তারা ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর নির্দেশনা সরাসরি শুনতে পাননি।
আলজাজিরার সাংবাদিক সাফওয়াত আল কাহলুত বলেন, গাজার মানুষ এখনও এটাতে মনস্তাত্বিক যুদ্ধ বলে বিশ্বাস করেন। তারা এটাকে বাস্তবে মানতে পারছেন না। অনেকে একে অন্যের কাছে প্রশ্ন করছেন, এটা কী বাস্তব নাকি কোনো দুঃস্বপ্ন। ১৬ বছর ধরে প্রতিরোধ গড়ে তোলা এলাকাটি এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় পরিণত হয়েছে।
আল-কাহলুত বলেন, বাস্তবিক অর্থে এ অঞ্চলের ১১ লাখ বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার মতো পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নেই। তারা কিভাবে সরে যাবে? গাঁধায়? তাদের কাছে এখন পর্যাপ্ত গাঁধা বা গাড়িও নেই। গত সাত দিন ধরে জ্বালানি সংকটের কারণে সেখানকার কোনো গাড়িই এখন চলাচল করতে পারছে না। ফলে এখানকার পরিস্থিতি ১৯৪৮ সালের বিপর্যয়ের মতো। ওই সময়ে ৭৫ হাজার ফিলিস্তিনি আরবে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, গতকাল পর্যন্ত এখানকার লোকেরা কী খাবে তা খোঁজ করছিলেন। কিন্তু আজকে তারা কিভাবে এলাকা ছাড়বেন আর কই যাবেন তার খোঁজ করছেন। বর্তমানে অন্তত ১০ লাখ ফিলিস্তিনি আতঙ্কিত, আশঙ্কাগ্রস্ত। তাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। ফলে তারা বুঝে উঠতে পারছেন আসলে এখন তাদের কী করা উচিত। এখন শিশুরা আমাকে প্রশ্ন করছে যে তারা কোথায় যাবে?
সবত্র বিশৃঙ্খলা
গাজায় জাতিসংঘের শরণার্থী ক্যাম্পের কর্মকর্তা ইনাস হামদান এখানকার পুরো পরিস্থিতিকে সর্বত্র বিশৃঙ্খল বলে উল্লেখ করছেন। তিনি বলেন, এখানকার লোকজন কে কী করবে কিছুই বুঝতে পারছেন না। তারা সামনে যা পারছেন সব ব্যাগে গুছিয়ে নিচ্ছেন।
পরিস্থিতি নিয়ে গাজার রেড ক্রিসেন্টের মুখপাত্র নেবাল ফারসাখ বলেন, খাবারের কথা ভুলে যাও, বিদ্যুতের কথা ভুলে যাও, তেলের কথা ভুলে যাও। তাদের সামনে এখন কেবল চিন্তা হলো বেঁচে ফিরলে এসব তুমি আবার ফিরে পাবে। তিনি বলেন, বর্তমানে সেখানকার ১১ লাখ বাসিন্দা সরিয়ে নেওয়ার মতো নিরাপদ কোনো জায়গা নেই।
হাসপাতালের ভয়াবহতা
যুদ্ধের কারণে গাজায় হাসপাতালের পরিবেশ ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। রোগীদের অবস্থা এতটা আশঙ্কাজনক যে তাদের কোথাও সরিয়ে নেওয়ার মতো অবস্থা নেই। এমনকি এমন পরিস্থিতির মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মীরা এলাকা ছাড়তে ও রোগীদের পরিত্যাগে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তারা তাদের অন্য সহকর্মীদের ডেকে বিদায় জানিয়ে এসেছেন।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক জানান, ইসরায়েলের এ আল্টিমেটামের কারণে এ অঞ্চলের ১১ লাভ অধিবাসীকে সরে যেতে হবে। ইসরায়েলের কাছে এ আল্টিমেটাম প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে জাতিসংঘ। তিনি ইসরায়েলের এ ধরনের আদেশের ফলে ভয়াবহ বিধ্বংসী মানবিক বিপর্যয় ঘটবে বলে মন্তব্য করেন।
Leave a Reply